Tuesday, 26 December 2017

বিচিন্ত কথন গ্রন্থের ভূমিকা / অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম

বিচিন্ত কথন, ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। প্রবন্ধ কত সরস, হৃদয়গ্রাহী ও পাঠসুখকর হতে পারে তা জানতে হলে বইটি অবশ্যই পড়া আবশ্যক। এটির প্রত্যেকটি লাইনকে পাঠক নিজের জীবনের সঙ্গে সহজে মিলিয়ে নিতে পারেন। গ্রহণ করতে পারেন বাণী হিসেবে। লেখক বইটির ভূমিকা যেটি লিখেছেন সেটি আরো হৃদয়গ্রাহী। লেখক ‘বিচিন্ত কথা’ গ্রন্থের ভূমিকায় যা লিখেছেন তার কিয়দংশ তুলে ধরা যা:

পুস্তক, চিন্তার লালিত্য পোষণ হতে উৎসারিত আদর্শিক স্পন্দনের লিখিত রূপ, যা পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়।
প্রত্যেক মানুষের মনে স্বকীয় চিন্তা-চেতনার নিবাস থাকে। তবে তা প্রকাশিত না হলে আলোচনার বাইরে থেকে যায়। ফলে এরূপ অপ্রকাশিত চিন্তনের কার্যকারিতা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। ব্যক্তির মতো কিংবা ব্যক্তির আদর্শ ও অনুভাবনার মতো ব্যক্তিভেদে চিন্তার রূপাবয়বও ভিন্ন হয়। শুধু তাই নয়, প্রকাশ ভঙ্গিতেও দেখা যায় নানা বৈচিত্র্য। লেখালেখি একটি জটিল শিল্পকর্ম। জটিল শিল্পকর্ম হিসেবে লেখার বৈচিত্র্য-নিপুণতা সবচেয়ে সর্বজনীন, আবার সবচেয়ে বিতর্কমুখর। কারও সঙ্গে কারও চিন্তা ও মননের মিল ঘটে যাওয়া যেমন অস্বাভাকি কিছু নয়, তেমনি অস্বাভাবিক নয় অমিল হওয়া। বরং অমিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থেকে যায়। আলোচ্য গ্রন্থে এই অমিলকে মেনে নিয়ে নিজস্ব চিন্তনকে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কাউকে আহত করার বা কারও চিন্তাকে অবহেলা করার কোনো ইচ্ছা মোটেও প্রদর্শিত হয়নি। যদি এমন কিছু থেকে থাকে তবে সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী।

এই গ্রন্থে প্রকাশিত বক্তব্যসমূহ আমার নিজস্ব চিন্তার পরিস্ফুটন মাত্র। এখানে যে চিন্তন লৈখিকরূপে প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারণার মনাঙ্গিক বিচার-বিশ্লেষণ এবং অভিজ্ঞতাজাত উপলব্ধিমাত্র। এক জনের চিন্তার সঙ্গে সবাই
একমত হবেন, এমনটি আশা করা যায় না। তবে বক্তব্যসমূহের ঐক্য-অনৈক্যের মাধ্যমে পাঠকের মনে যে অনুভূতিই সৃষ্টি হোক না কেন এবং পুস্তকে বিধৃত বক্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে যে সমালোচনাই হোক না কেন, ওটাই হবে আমার লেখার সার্থকতা। ঐকমত্য প্রকাশ যেমন চিন্তার স্ফুরণ তেমনি ভিন্নমত পোষণ করাও চিন্তার স্ফুরণ। বরং ভিন্নমত পোষণে যে ভিন্ন ধারণার সৃষ্টি করে, তা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও তর্কে-বিতর্কে আরও জোরালো এবং যুক্তিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সবার মত বা অমতের প্রতি রইল শ্রদ্ধাবিমল শুভেচ্ছা।

No comments:

Post a Comment