Wednesday 13 February 2019

জাতীয় কবি নজরুল, প্রমাণ কোথায়? / ড. মোহাম্মদ আমীন


ছোটোবেলা থেকে জেনে এসেছি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। চাকুরিতে যোগদানের পর বিভিন্ন মুখে জানতে পারি, কাজী নজরুল ইসলাম সরকারিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নন। তিনি কেবল লোকমুখে প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং তাঁর ‘জাতীয় কবি’ পদবি ধারণের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই। এমন অভিযোগ আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব হিসেবে যোগদানের পর নিজ উদ্যোগে প্রকৃত বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রযোজ্য সময়ে জারিকৃত গেজেট প্রজ্ঞাপনগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখতে থাকি। 
শিক্ষামন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে যোগদানের পর আমার উদ্যোগ আরও সহজ এবং
সংগতকারণে আরও বেগবান হয়। রহস্য উন্মোচনের জন্য কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট বা কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কি না তা অনুসন্ধানে ব্রত হই। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে অগাস্ট তিনি বাংলাদেশেই মারা যান। তাই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি আমি ওই সময়ে প্রকাশিত গেজেটপ্রজ্ঞাপন এবং সরকারি পত্রের মধ্যে সীমবাদ্ধ রাখি। প্রসঙ্গত, এর আগে বা পরে নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হলে তা আমার অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যেতে পারে। 
অনুসন্ধানের অনিবার্য পর্যায় হিসেবে আমি, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের মে থেকে শুরু করে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে অগাস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সবগুলো গেজেট খুঁজে দেখেছি, কিন্তু কোথাও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট নোটিফিকেশন বা প্রজ্ঞাপন কিংবা অনুরূপ কোনো সরকারি আদেশ পাইনি। সচিবালয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত ওই সময়ের সবগুলো গেজেট খুঁজেছি, কিন্তু প্রত্যাশিত কোনো প্রজ্ঞাপন আমার চোখে পড়েনি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মাননা এবং অনারারি ডিগ্রি প্রভৃতি প্রদান সংক্রান্ত দলিলও পর্যালোচনা করা হয়।ওখানেও কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণক পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে।
সংস্কৃত মন্ত্রণালয়েও খোঁজ-খবর নিয়েছি, সেখানেও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট রক্ষিত নেই। আর্কাইভ এবং বাংলা একাডেমিতেও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো প্রকার দলিল পাওয়া যায়নি। তবে সংস্কৃত মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে একুশে পদক প্রদান সংক্রান্ত প্রমাণক পাওয়া গিয়েছে। স্বাধীনতার পর সচিবালয়ে সচিব, অতরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপসচিব এবং সেকশন অফিসার হিসেবে চাকুরি করেছেন এমন অনেকের কাছে নজরুলের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণার বিষয়টি জানতে চেয়েছি। সিনিয়র-জুনিয়র কোনো অফিসার এ বিষয়ে কোনো গেজেট দেখেননি বলে জানান। তাঁদের অভিমত, কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কাগজকলমে প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে নন। 
এ বিষয়ে নজরুল ইনস্টিটিটের অস্পষ্টতা আরও বেশি। ইন্সটিটিউটের কয়েকজ জানান, মন্ত্রিপরিষদের একটি বৈঠকে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয়
স্বীকৃতির প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল। কখন প্রশ্নের উত্তরে তারা কেউ দিতে পারেননি। কয়েকজন বলেছেন, সম্ভবত এরশাদের আমলে প্রস্তাবটি পাস হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আমি ওই সময় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বেশ কয়েকটি সভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করেও এমন কোনো তথ্য পাইনি। 
মৌখিকভাবে কেউ জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হতে পারেন এবং জনস্বীকৃতিও পেতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কেবল মৌখিক বিষয় নয়, আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বভৌম শক্তির দাপ্তরিক ঘোষণার বিষয়টিও থাকে। অধিকন্তু, জাতীয় কবি ঘোষণার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে জাতীয় কবি ঘোষণা করতে হলে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। কাজী নজরুল ইসলামের বেলায় এসব করা হয়েছে-- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, অন্তত আমি পাইনি। অনেকে বলেন, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কে করেছে, কোথায় এবং কীভাবে? এ প্রশ্নের সদুত্তর দূরে থাক, কোনো উত্তরই পাওয়া যায় না। 
আমার লেখা পড়ে অনেক উপহাস করে বলবেন, নজরুলের ‘জাতীয় কবি’ “তাঁর স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। তিনি স্বীকৃতি ছাড়াই আমাদের জাতীয় কবি।” আমিও তাই মনে করি, কিন্তু স্বীকৃতিটা কী এতই দামি কিংবা নজরুল কী এতই ফেলনা যে তা দেওযা যাবে না!, আমরা কী এতই অনুদার! যদিও ‘জাতীয় কবি’ উপাধি নামের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি
ড. মোহাম্মদ আমীন
নজরুলের জন্য অনিবার্য নয়, কিন্তু আমরা কতটুকু বোধের পরিচয় দিতে পেরেছি- সে প্রশ্ন করা কি অন্যায় হবে? অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু নামের কী গেজেট নোটিফেকশনে হয়েছে? হয়নি, কারণ ‘বঙ্গবন্ধু’ সরকারিভাবে সময়ে সময়ে জনগণকে প্রদত্ত কোনো পদক বা সম্মাননা নয়, কিন্তু জাতীয় কবি, জাতীয় অধ্যাপক প্রভৃতি সরকারিভাবে জনগণকে সময়ে সময়ে প্রদত্ত সম্মাননা, যা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী অর্পণ করা হয়। যেমন : একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক প্রভৃতি। অধিকন্তু, বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় কবি এক নয়, বঙ্গবন্ধু অদ্বিতীয়, কিন্তু জাতীয় কবি একাধিক হতে পারেন।পৃথিবীর অনেক দেশে একাধিক জাতীয় কবি আছেন, আমাদের দেশে যেমন আছেন একাধিক জাতীয় অধ্যাপক।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও সরকারিভাবে ঘোষিত নয়। অবশ্য পরবর্তীকালে সরকারি দলিলে বিভিন্ন প্রসঙ্গে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে জাতীয় কবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশও প্রণীত হয়েছে। এটিও স্বীকৃতি, যদিও তা পরোক্ষ। 
নজরুল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কবি ঘোষিত না হলেও তিনি আমাদের জাতীয় কবি; আকাশ-বাতাসও এটি জানে। জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের পরিচিতি এত ব্যাপক, গভীর, নিবিড় ও হার্দিক যে, এখানে সরকারি স্বীকৃতি সমুদ্রের প্রতি গোষ্পদের জলদানের মতোই তুচ্ছ। আকাশের অসীমতার প্রমাণ দিতে আকাশ লাগে, আকাশ কী দুটো আছে?

Sunday 10 February 2019

রায়োহরণ / অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক



রায়োহারণ ড মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি বৈশ্বিক উপন্যাস।  বৈশ্বিক সম্পর্ক, মনস্তাত্বিক জটিলতা,
প্রেম, প্রাত্যহিক জীবনের টানাপোড়েন,  সাংঘর্ষিকতা, মানুষের মূল্যবোধ, মূল্যবোধের অবক্ষয়, ধর্ম, আত্মপরতা, দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিবেশ, সমাজ, শিক্ষা ও বংশের সম্পর্ক, পারিবারিক জীবন প্রভৃতি বিধৃত হয়েছে  বাস্তবতার নিরিখে।
এটা উপন্যাস, ইতিহাস নয়। ইতিহাস আর উপন্যাসের পার্থক্য কী? লেখকের ভাষায়, “ ইতিহাসে চরিত্রকে ঠিক রেখে ঘটনা বানানো হয়, কিন্তু উপন্যাসে করা হয় তার উলটোÑ উপন্যাসে ঘটনাকে ঠিক রেখে চরিত্রকে কাল্পনিক বিন্যাসে উপাস্থাপন করা হয়। এজন্য ইতিহাসবেত্তাভেদে ঘটনা নানরূপ ধারণ করে। ইতিহাস বলুন আর উপন্যাস বলুন দুটোতে কল্পনার মিশেল থাকে। তবে, উপন্যাসের বর্ণনা বাস্তবতা থেকে সৃষ্ট বহমানতার হদৃয়োৎসরিত নির্যাস, অন্যদিকে, ইতিহাস কল্পনা থেকে সৃষ্ট কাল্পনিক বিলাসের পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণন। ইতিহাসবেত্তার প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকে এবং এটি এত প্রবল যে, প্রভাবিত না হয়ে পারা যায় না। পক্ষপাতই ইতিহাসবেত্তার লক্ষ্য কিন্তু, কিন্তু উপন্যাসে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রভাবিত হওয়া কষ্টকর, কারণ উপন্যাসে নিরপেক্ষ থাকাই ঔপন্যাসিকের অন্যতম লক্ষ্য থাকে।”

রায়োহরণ উপন্যাসে নায়ক আছে, কিন্তু নায়িকা নেই। প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে যেসব লোকের সান্নিধ্য আসা হয়েছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কথোপকথন আর যেসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে সেসব নিয়ে উপন্যাসটির অবয়ব চয়িত। উপন্যাসের অধিকাংশ চরিত্র পাঠকের পরিচিত এবং প্রত্যেকে বিখ্যাত। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক ভিএস নাইপল ও নাদিয়া মুরাদ থেকে শুরু করে বিশ^খ্যাত বিজ্ঞানী স্টভেন হকিং, খ্যাতিমান দাশনিক চিকুচি এবং জামাল খাসোগি, মাসাহিতো, সুসানা ইয়োগেনা,
  জ্যাকব, গৌরি লঙ্কেশ, খলিল রাশো, এলিন এরসন, ডেওয়ার্ড হোবেল, অতিবীর-সহ আরো অনেক বিশ^শ্রুত ব্যক্তি এ উপন্যাসের চরিত্র।  বর্তমান বিশ^ এবং মানবীয় সম্পর্ক নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে যথাসম্ভব অবিকল দ্যোতনায় তুলে ধরা হয়েছে।
বর্তমান বিশে^ মুসলিম সম্প্রদায়ের কর্মকা-, দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রতিক্রিয়া, আর্থসামাজিক ও রাজনীতিক প্রভাব, ঋদ্ধতাগত অভিজ্ঞান, সর্বোপরি জনসংখ্যা হিসেবে তাদের দুর্বল অবস্থার স্বরূপ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়Ñ প্রকৃতপক্ষে আদৌ উত্তরণ সম্ভব কি না প্রভৃতি এ  উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলেও পারিবারিক জীবন আর প্রেম ভালোবাসার মতো ব্যক্তিগত বিষয়ও প্রসঙ্গক্রমে সমগুরুত্বে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চলমান ধ্যানধারণা ও চিন্তাচেতনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন- উপন্যাসটির প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাধারণভাবে আমারা যা সত্য এবং যৌক্তিক বলে জেনে আসছি,  সেসব বিষয়ে বিপরী মতবাদ আপনার মনকে অবশ্যই নাড়া দেবে। বইটি সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে দেখতে পারেন লিংকটি :  
           https://www.facebook.com/groups/1559208037452930/?ref=bookmarks




Tuesday 29 January 2019

নির্বাচন / ড. মোহাম্মদ আমীন



ইংরেজি ইলেকশন শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচন। শব্দটির আভিধানিক অর্থ প্রতিনিধি বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া বিশেষ। সাধারণত গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। তবে বাছাই অর্থেও নির্বাচন শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। সুতরাং, গণতন্ত্রে নির্বাচন একটি অনিবার্য উপাদান এবং অনিবার্য প্রক্রিয়া। মনে করা হয় Ñ আধুনিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণকে সরকারে সামিল করা হয়। এটা কিয়দংশে সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়, তবে বিপুল জনগণকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করার আর কোনো সহজ উপায় এ পর্যন্ত মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত তা পারা না যায, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনই হবে গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের অন্যতম উপায়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ মঙ্গল গ্রহে উপনীত হতে পেরেছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে তাদের অগ্রগতি ওই কম্পিউটার পর্যন্ত, ব্যবস্থাপনায় যে মানুষের হার্দিক বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সে পর্যন্ত এখনো পৌঁছা সম্ভব হয়নি।

নির্বাচনে সবসময় ভালো লোক বা পছন্দের লোক পাওয়া যাবেÑ তা বলা যায় না। ভালোপ্রার্থী না-থাকুক, না-থাকুক পছন্দের প্রার্থী, যারা আছেন তাদের মধ্য থেকে কম-খারাপকে পছন্দের একটা সুযোগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থেকে যায়। তাই এটাকে অনেকে মন্দের ভালো বলে অভিহিত করেন, যা ভোট না হলে পাওয়া যায় না। সাধারণভাবে প্রত্যেকে ভালো লোকটাকে নির্বাচিত করতে চান, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে ওই ভালো লোকটা নির্বচানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন না বা করার সুযোগ পান না। শুধু উন্নয়নশীল দেশে নয়, উন্নত দেশের ক্ষেত্রেও কথাটি কম প্রযোজ্য নয়। ভালো লোকের যদি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সুযোগ পেত তাহলে নিশ্চয় গণতন্ত্র আরও অর্থবহ হতো। তবে, ভালো লোক কে? কী তার বৈশিষ্ট্যÑ এ নিয়ে কোনো সর্বজনবাদিসম্মত সংজ্ঞার্থ নেই। এটি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক একটি ধারণা, যা দল, ব্যক্তি, ধর্ম বা অন্য আরো অনেক বিষয়ভেদে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ডেমোক্র্যাটদের কাছে সবচেয়ে ভালো লোকটি রিপাবলিকানের কাছে হয়ে যেতে পারে সবচেয়ে মন্দ লোক। তাই ভালো মন্দ নয়, নির্বচানে যে বেশি ভোট পায় সেই নির্বাচিত হয়, তাত্ত্বিকভাবে তাকে পছন্দের লোক মনে করা হয়। এখানেই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা। কারচুপি করে নির্বাচিত হলেও এমন অপরাধ করে জয়ী হয়ে আসা লোকই হয় জনপ্রতিনিধি।
তারপরও, আমি মনে করি, প্রত্যেক নাগরিকের নির্বাচনে ভোট দেওয়া উচিত, তাহলে একদিন প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করবে। তখন, যারা কেবল শক্তি আর অর্থ দিয়ে নির্বচানে জিতে আসতে চায় তাদের পরাজয় ঘটবে। আপনি যদি গণতন্ত্র চান আপনাকে অবশ্যই নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি আপনি নির্বাচনকে অবহেলা করেন, নানা অজুহাত তুলে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যান, তাহলে আপনার অভিযোগ করার জায়গাটা সংকুচিত হয়ে যাবে। ভোট আপনাকে হয়তো কিছু দেবে না, কিন্তু আপনার ভোট কোনো একদিন একটি দেশপ্রেমিক মানুষকে নির্বাচনে এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা দেবে। এটি ব্যক্তি হিসেবে আপনার অনেক বড়ো প্রাপ্তি।
আমি বলি, ভোট দিতে ন-যাওয়া মানে গণনা হতে বাদ পড়া। দেশের নাগরিক হিসেবে গণনা থেকে বাদ পড়া মরে যাওয়ার সামিল, বেঁচে থাকার মধ্যেই কি আপনি মরে যেতে চান? । তবে দেখতে হবে, যাতে আপনার ভোট আপনি স্বাধীনভাবে দিতে পারছেন। প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের ভোট সংরক্ষণ করার  উদ্যোগ নেন- তাহলে পৃথিবীর করো সাধ্য নেই আপনার ভোটে হস্তক্ষেপ করার, নির্বাচনে কারচুপি করার। সাধারণ জনগণ এত কিছু বুঝেন, কিন্তু একথাটি কেন বুঝেন না, আমি জানি না। এর একটি কারণ থাকতে পারে এবং সেটি হচ্ছে জনগণের মধ্যে ইতিবাচকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা। এটি হয়তো কোনো দলকে সাময়িকভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করাতে পারে, কিন্তু এভাবে চললে একদিন পুরো দেশটাই একদিন ক্ষমতাহীন হয়ে যাবে, যাযাবরের মতো।
অনেকে ভোট দিতে যান না। তাদের অভিমত, ভোট দিয়ে কী হবে, একজনও ভালো লোক দাঁড়ায়নি, এ অবস্থায় ভোট দিতে যাওয়া মানে নিজের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া। এরকম চিন্তা করে সাধারণ্যে ভালো লোক হিসেবে পরিচিত অনেকে ভোট দিতে যান না। যারা ভোট দিতে যান না, তাদের অধিকাংশই সুশীল এবং নিরীহ, শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান ও রাজনীতিক সচেতন। এই ভালো লোকদের ভোটবৈরী মানসকিতার জন্য খারাপ লোকেরা জাতীয় সংসদে যাবার সুযোগ পায়। নির্বাচিত খারাপ লোকগুলো হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া হতে বিরত থাকা ভালো লোকের নিষ্ক্রিয়তার ফসল। অধিকন্তু ভালো লোকগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে বলে খারাপ লোকেরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সুযোগ পায়। এমন লোক যতই ভালো হোক, তাদের ভালোত্ব গ্রন্থগত বিদ্যার মতো মগজেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। মগজ দিয়ে কিছুই হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা মেধা হয়ে সক্রিয় হয়ে উঠে।
 ভোটে কারচুপি উন্নয়নশীল দেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। অর্থ, ক্ষমতা আর পেশিশক্তির কাছে বন্দি হয়ে পড়ে মানুষের ভোট, নির্বাচন এবং গণতন্ত্র। ফলে ওই সব দেশে গণতন্ত্র উচ্চকিত হতে পারে না, পেশীতন্ত্রই মাথাচাড়া দিয়ে চলে। তাই জনগণের চিন্তা ক্রমশ নেতিবাচকতার দিকে এগিয়ে যায়। তারা দেশপ্রেম হতে ধীরে ধীরে সরে পরে। সরকার, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের উপর একটা ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে, ঘৃণা থেকে আসে বৈরীভাব। এই বৈরীভাব জনমনে সৃষ্টি করে হতাশা। ফলে দেশের উন্নয়ন  ও সমৃদ্ধি ব্যহত হয়। দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে, ক্ষমতাসীন দল সাময়িক ক্ষমতার মোহে উল্লসিত হয়তো হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন তা স্থায়ী হয় না। মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত সে তুলনায় রাষ্ট্রের জীবন অসীম।
নির্বাচনের সফলতা-ব্যর্থতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। একদল বলেন, যে দেশের অধিকাংশ জনগণ শিক্ষিত ও সচেতন নন সে দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অর্থহীন। নির্বাচনের চোখে গাধা আর স্টিভেন হকিং সমান। এজন্য সক্রেটিস গণতন্ত্রকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন গণতন্ত্র মূর্খের তন্ত্র। এখানে বিড়াল আর বাঘ -দুটোকে সমগুরুত্বে মূল্যায়ন কর হয়Ñ যদি বাস্তবক্ষেত্রে তারা সমমূল্যায়িত হওয়ার যোগ্য নয়। ফলে  অধিকাংশ যোগ্য লোক বাদ পড়ে যায়। অধিকন্তু গণতন্ত্রে সাধারণত সংখ্যালঘুরাই সরকার গঠন করে, সংগত কারণে সংখ্যঘরিষ্টরা সরকারি কাজ হতে দূরে চলে যায়।
 প্রত্যেক কিছুর ভালোমন্দ দুটো দিক রয়েছে, রয়েছে সীমাবদ্ধতা। নির্বাচনেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু এর সুবিধা, অসুবিধার চেয়ে বেশি। ক্ষমতার পরিবর্তন সাধারণত রক্তপাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে এসেছে, কিন্তু নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে রক্তপাত ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। নির্বচন, বুলেটকে ব্যালটে নিয়ে আসে। হয়তো যথার্থ লোক নির্বাচিত হয় না, কিন্তু রক্তপাতহীন ক্ষমতা পরিবর্তনÑ এটাই বা কম কী! অতএব, ক্ষমতার রক্তপাতহীন পরিবর্তন নির্বাচনের শ্রেষ্ঠতম একটা দিক।

Sunday 14 January 2018

ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার / শ্রাবন্তী নাহা অথৈ



বইয়ের চেয়ে উত্তম উপহার এবং ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ আর নেই আর এই দুটির সমন্বয় যদি ঘটানো যায় তাহলে যে কারো জীবন হয়ে ওঠে মধুর এবং ভালোবাসাময় যে জীবনে ভালোবাসা থাকে সে জীবনে সবকিছু পাওয়া হয়ে যায় জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশিত সুখের বিরল উৎস প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, রুচি-অরুচির ভিন্নতা আছে, আলাদা অনুভূতি আছে, যা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন কিন্তু ভালোবাসা এবং বস্তু হিসেবে বইয়ের ক্ষেত্রে সবার ইচ্ছা অভিন্ন ভালোবাসা পেলে যে খুশি হয় না সে পশুও নয়, জড়; মরা লাশ বই পেয়ে যে আপ্লুত হয় না, সে লাশের চেয়েও অধম তবে বই হতে হবে প্রিয়জনের মনকে নাড়া দেওয়ার মতো অনিন্দ্য আমি এখানে এমন দুটি বই নিয়ে আলোচনা করব, যে বই দুটি আপনার প্রিয়জনকে দিলে এবং আপনার প্রিয়জন আপনাকে দিলে পরস্পরের প্রতি শুধু ভালোবাসা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতার নিবিড় আবেশে নতুন একটা জগৎ সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে বহুগুণ বেড়ে যাবে পরস্পর প্রীতি কারণ বই দুটিতে এমন বিষয় আছে, যা ভালোবাসার মূল্য কী এবং কীভাবে, কোথায় কাকে ভালোবাস দিতে হয় এবং কীভাবে তা স্থায়ী করা যায়- সেটিই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের আচরণে তুলে ধরা হয়েছে
তিনে দুয়ে দশ

তিনে দুয়ে দশ. মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখা একটি উপন্যাস যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো বয়সের সিনিয়র, মুরব্বি, গুরুজন বা বয়স্কদের প্রতি কোনো জুনিয়র বা শিশুকিশোর কোনো উপহার দিতে চাইলেতিনে দুয়ে দশউপন্যাসের চেয়ে আর কোনো ভালো
উপহার হতে পারে না। মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, সব পর্যায়ের অগ্রজ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক শিক্ষিকা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, সিনিয়র নেতা প্রভৃতিসহ যে কোনো মুরব্বি বয়স্ক গুরুজনকে যদি এমন কোনো উপহার দিতে চান, যে উপহার পেলে তিনি খুশি হবেন এবং আপনার প্রতি তার ভালোবাসা, দরদ, মায়ামমতা, স্নেহ, সহানুভূতি, ধৈর্য, বিবেচনাবোধ, সন্তুষ্টি প্রভৃতি বেড়ে যাবে; তাহলে আমি বলব আপনি, তাকে . মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখাতিনে দুয়ে দশউপন্যাসটি উপহার দিন। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা ভালোবাসা দিয়ে আদায় করা যায় না- এটিই বইটির মূল্য বিষয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত এই বইটি হতে পারে ভালোবাসা দিবস-সহ যে কোনো দিবসে আপনার যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার


তিনে দুয়ে দশ একটি অনবদ্য উপন্যাস। অনবদ্য বলার কারণ আছে। এটি শুধু কথার কথা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা হতে লিখিত এই উপন্যাসটি শিশুকিশোর হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য উপযোগী এবং দ্রুত মননশীলতার পরিবর্তনের এক যাদুকরি শক্তি রয়েছে। এই উপন্যাসের কাহিনী বিরল ভালোবাসার অনন্ত মহিমা যেন। যা সবার মনে দাগ কাটতে সক্ষম। শিশু-কিশোরদের
মনমানসিকতাকে আদর্শ চেতনায় জাগ্রত করতে হলে বয়স্কদের কী করতে হবে, কেমন হতে হবে তাদের আচরণ, কীভাবে তাদের মূল্য দিতে হবে প্রভৃতি ছাড়াও এই বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক সমাজের কর্তব্য কী, তা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অনুপম এক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আবার জ্যেষ্ঠদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং আনুগত্য পেতে হলে অনুজদের কী করতে হবে তাও এই উপন্যাসে বাস্তব ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্ণিত হয়েছে।

লেখকের জীবন থেকে নেওয়া এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়। পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার পুথিনিলয় স্টলে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। মূলত ভালোবাসা কী, কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করা যায়, অতি খারাপকেও ভালো লোকে পরিণত করা যায়, অতি খারাপ ছাত্র বা সন্তানকেও মেধাবী করে দেওয়া যায়; সেটাই এই গ্রন্থে লেখক তার জীবনের একটি ঘটনা দিয়ে উপন্যাসে উপন্যাসে বিধৃত করেছেন। আমি মনে করি, এটি ভালোবাসা দিবসসহ প্রত্যেক দিবসে, বিশেষ করে পিতামাতা মরুব্বিদের প্রতি এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপহার


ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা

ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা . মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার আগে এর একটি গল্প ফেসবুকে
প্রকাশিত হয়। গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফেসবুক ভাইরাল হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্যার আমাকে বিয়ে করুন নামের গল্পটি দিয়ে অনেকগুলি চ্যানেল ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করে। অর্থনীতির অধ্যাপক সেলসম্যান এবং বউশিরোনামের গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার বোদ্ধামহল গল্পের নতুন আস্বাদন পায় যেন। আমি গল্প দুটি পড়ে এতই বিমুগ্ধ হয়ে পড়ি যে, আমি আপনাদের জন্য এই লেখা লিখতে অনুপ্রাণিত হলাম। এই বইয়ের ভালোবাসার গল্পগুলি পড়ে আমার মনে গল্প সম্বন্ধে যে ধারণা ছিল, তা পাল্টে গিয়ে নতুন একটা ধারণা সৃষ্টি করল। গল্প শুধু গল্প নয়। জীবন, জীবনটাই গল্প। আর একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারলাম, লিখতে জানলে যে কোনো সাধারণ বিষয়ও অসাধারণ হয়ে উঠে। যেমন পরিবেশনার গুণে সাধারণ খাবার হয়ে ওঠে তৃপ্তির চূড়ান্ত অবগাহন। ভালোবাসা কী এবং ভালোবাসা দিয়ে জীবনকে কীভাবে বদলে দেওয়া যায় তা আমি এই বই পড়ে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। ভালোবাসা জীবনের জন্য অপরিহার্য। যে জীবনে ভালোবাসা নেই সে জীবনে যেন কিছু নেই। এই বইয়ে ভালোবাসার মাধ্যমে জীবনগড়ার প্রতিটি দিক, প্রতিটি ক্ষণ এবং প্রতিটি বিষয় গল্পে গল্পে তুলে আনা হয়েছে। জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখলেও এমন লেখা যায় না, অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীক্ষণ করতে হয় অনুভবের বাস্তবতায়। স্বপ্নকে টেনে নামাতে হয় জীবেনর কানায়। গল্পসমূহ পড়লে বোঝা যায়, লেখক তাই করেছেন এবং ভালোবাসাকে খুব ভালোভাবে প্রেমময় অনুভবে নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গল্পসমূহের ভাষা এত সহজ এবং শব্দচয়ন এত মনোরম যে, পড়লে মন বিগলিত হয়ে যায়। যে কোনো মন তা যতই কঠিন হোক না কেন, নরম হয়ে যায়। গল্পগুলির ভাষা ভালোবাসার মতোই প্রাঞ্জল। গল্পগুলিতে মুগ্ধতা যেন হৃদয়ের আবেগে তাড়িত হয়ে প্রেমে প্রেমে একাকার হয়ে গেছে। অল্পকথায় অনেক
শ্রাবন্তী নাহা অথৈ
বেশি প্রকাশের ক্ষমতা, ছোটো কথায় ভালোবাসার সাহসী প্রকাশ এত ঋদ্ধ যে, গল্প শেষ না করে কোনোভাবে ছাড়া যায় না। এমন অনুভূতির জন্যই হয়তো বইকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ভালোবাসাকে বলা হয়েছে স্বর্গীয় অসাধারণ ২০টি গল্প নিয়ে সজ্জিত এই বইটি পড়লে পাঠক এবং পাঠকের উত্তরসুরী- সবার বিবেক ভালোবাসার মাধুর্যে আনন্দ আর মমতার ঔদার্যে সবার মন বিকশিত হয়ে উঠবে। পরস্পরের প্রতি সৃষ্টি হবে স্নেহপ্রেমপ্রীতি এবং উদার সহানুভূতি। ভালোবাসা দিয়ে কীভাবে একজন দুষ্ট ছেলেকেও কিংবা অবাধ্য বন্ধুকেও নিজের একান্ত ভালোবাসার আনুগত্যে পরিণত করা যায়, তার কৌশল এই বইয়ে বাস্তব গল্পে বিধৃত করা হয়েছে। বইটি পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়-এর স্টলে।