Thursday 7 July 2016

প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি : অসাধারণ একটি বাংলা ব্যাকরণ / মিনহা সিদ্দিকা


পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘প্রমিত ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ একটি অসাধারণ ব্যাকরণ। ড. হায়াৎ মামুদ
ড. হায়াৎ মামুদ ও ড. মোহাম্মদ আমীন
ও ড. মোহাম্মদ আমীন-লিখিত এ গ্রন্থটি শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা শেখায় আগ্রহীদের জন্য হতে পারে একটি অনবদ্য সংগ্রহ।
বাজারে বেশ কয়েকটি ব্যাকরণগ্রন্থ রয়েছে। তা হলে আর একটি ব্যাকরণগ্রন্থের প্রয়োজন কী? এ প্রশ্নের উত্তর হায়াৎ মামুদ বল প্রয়োজন রয়েছে এবং এ প্রয়োজনীয়তার অনিবার্যতাকে পূর্ণ করার জন্য বাংলা ভাষার একজন শিক্ষক ও বাংলাভাষী হিসাবে মাতৃভাষার প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতি থেকে ‘প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ’ গ্রন্থটি রচনা করি। 

ভাষা বহমান নদীর মতো গতিময় ও চঞ্চল।  নদীর প্রবাহ-ভিত মাটি কিন্তু ভাষার প্রবাহ-ভিত ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। এটি
 ব্যাকরণটি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক ড. মোহামম্মদ আমীন ও হায়াৎ মামুদের ভাষ্য অভিন্ন । তাঁদের মতে, বাংলা বাংলা ভাষার সূচনালগ্ন হতে নানা কারণে বিভিন্নভাবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রমিত বানান রীতির প্রবর্তনসহ বাংলা ভাষা বা বাংলা বানানে যে পরিবর্তন, সংশোধন, সংস্কার বা বিচরণগত পরিবর্তন হয়েছে তা আলোচ্য ব্যাকরণগ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে। মাতৃভাষার প্রতি দায়শোধের ইচ্ছায় পরিণত বয়সে, তিনি এ গ্রন্থের জন্য যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা ইতোপূর্বে আর কোনো গ্রন্থের জন্য দেননি। এভাবে বিরামহীন সময় দিয়ে লেখা এটি তার প্রথম ব্যাকরণগ্রন্থ। বাংলা একাডেমি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা বানান ও ভাষা-রীতিতে যে পরিবর্তন বা সংস্কার করেছে- সেসব বিষয় এ গ্রন্থে উপস্থাপিত হয়েছে। এরূপ হালনাগাদ কোনো গ্রন্থ বাজারে নেই।
একাডেমি বাংলা ভাষার অবিভাবক। প্রমিত বানান, ভাষার নিয়মনীতি ও বানান বিষয়ক নানা শৃঙ্খলা নির্ধারণ এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ রেখে যথাসময়ে ভাষারূপ নদীর সুচারু নিয়ম-নীতি নির্ধারণ এর অন্যতম দায়িত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবর্তনের দিকে লক্ষ রেখে স্বল্পসময়ের মাঝে ওই পরিবর্তনকে প্রতিভাত করে
ব্যাকরণগ্রন্থ রচনা এবং তা সর্বস্তরের জগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলার ঐকান্তিক প্রয়াস লক্ষণীয়। আমাদের দেশে পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রত্যাশিত সময়ে মধ্যে নতুন ভাষারীতি সৃজনের ধারাবাহিকতায় ঘাটতি দেখা যায়। রীতি প্রণীত হলেও যথাযথ প্রচার এবং সর্বসাধারণের নিকট সহজলভ্য করে তোলার ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। সংগত কারণে হালনাগাদ ভাষারীতি ও প্রমিত বানান সম্পর্কিত পরিবর্তন খুব ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবার কাছে অজানা থেকে যায়। এজন্য প্রমিত ও শুদ্ধ বাংলা বানানে চলবে নৈরা্জ্য ও প্রচণ্ড স্বেচ্ছাচারিতা। এমনকি শিক্ষার্থিদের জন্য লিখিত ব্যাকরণগ্রন্থসমূহেও প্রমিত বানান সম্পর্কে বাংলা একাডেমির হালনাগাদ পরিবর্তনের যথার্থ্য প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই অধিকাংশ বাংলাভাষীর কাছে প্রমিত বানান ও হালনাগাদ ভাষারীতি অজানাই থেকে যায়। এ বিষয়ে বৈয়াকরণ বা পণ্ডিত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও নানা কারণে পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। বাংলা একাডেমি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বানান রীতির যে পরিবর্তন করেছে, তা এখনও সিংহভাগ শিক্ষার্থী এমনকি অধিকাংশ শিক্ষকেরও অজানা। এসব বিবেচনায় বাংলাভাষার সাম্প্রতিক পরিবর্তনসহ ভাষার হালনাগাদ অবস্থান-প্রকৃতির নানাদিক বিশ্লেষণ করে হালনাগদ প্রমিত বানানকে সহজলভ্য করে তোলা এবং ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে অবগত করানোর লক্ষ্যে ‘প্রমিত ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ গ্রন্থটি রচনা করা হয়। ড. হায়াৎ মামুদ বইটি লেখার বিষয় জানালেন, “এভাবে শ্রম দিয়ে রচিত আমার এ প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ। তিনি  আশা করেন, তার মৃত্যুর পরও  সহলেখক ড. মোহাম্মদ আমীন যথাপ্রয়োজনে ও যথাসময়ে ধারাবাহিক সংস্কারের মাধ্যমে আমাকে মাতৃভাষায় বাঁচিয়ে রাখবেন।

মানুষের আচার-আচরণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, রাজনীতি, ব্যক্তিগত দর্শন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোসহ অসংখ্য উপাদানের মাঝ দিয়ে ভাষাভাষীর প্রাত্যহিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসাবে নদীর মতো অবিরত ধেয়ে চলে। নদীর মতো ধেয়ে চলা ভাষার চলার পথে সৃষ্টি হয় নতুন শব্দ, ধ্বংস হয়ে যায় অনেক পুরানো চিহ্ন-বর্ণ-শব্দ, প্রাচীন রীতির বুক চিরে সৃষ্টি হয় নতুন রীতি; শব্দের পলিতে জেগে ওঠে অসংখ্য নতুন ভাষাচর। এসব ভাষাচরের উপর বিস্তৃত হয় নিবিড় অরণ্যের মতো রহস্যময় সম্পদে ঋদ্ধ অসীম সাহিত্যনগর- ছন্দোময় কবিতা, রূপময় গল্প, বিদগ্ধ বাণী, হৃদয়কাড়া গান আর প্রাণমগ্ন প্রকাশ। ভাষানদীর প্রবাহ এবং সৃষ্টির এ বহুমুখী দ্যোতনার বিশাল জগত অসংখ্য উপাদানের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ায় অবারিতভাবে ধাবিত হয়। এজন্য নদীর মতো ভাষাও কিছুটা স্বেচ্ছাচারী, কিছুটা অনিশ্চিত, কিছুটা দুরন্ত এবং প্রায় পুরোটাই প্রকৃতির মতো উচ্ছ্বল। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে ভাষার এবং তার প্রবাহ পথের। তাই এ স্বেচ্ছাচার, অনিশ্চিয়তা, দুরন্ত আর উচ্ছলতাকে স্নেহাবেশে সমন্বিত করে প্রাত্যহিক যোগাযোগের কাজে বাঙ্ময় প্রগাঢ়তার সুচারু সৌন্দর্যে মার্জিত রাখার জন্য নিত্য কিছু নিয়মনীতি প্রয়োজন হয়। যা ব্যাকরণ নামে পরিচিত। এ নিয়মনীতি নদীরূপ
লেখকদ্বয়ের সঙ্গে প্রকাশক শ্যামল পাল
ভাষাকে শাসন করার জন্য নয় বরং ভাষার আশ্রয় তথা মানুষের আচরণকে এমনভাবে সুসংহত করে তোলা, যাতে ভাষানদী তার মোহনীয় গতির বৈচিত্র্যময় ঐশ্বর্যে সাবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে পারে কোনোরূপ বিঘ্ন ছাড়া। অধিকন্তু সুশৃঙ্খল আবেশে সর্বজনীন বোধগম্যতা আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্যও ভাষার পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে স্বল্পসময়ের ব্যবধানে কিছু নিয়মনীতি বা শৃঙ্খলাসূত্র বেঁধে দিতে হয়। এ নিয়মনীতি ভাষাকে করে সুশৃঙ্খল, তার গতিকে করে অর্থবহ এবং বোধগম্যতাকে করে তোলে সর্বজনীন। আলোচ্য গ্রন্থে  মূলত এটাই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ড. হায়াৎ মামুদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও বাংলা বানান-বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আমীনের মেধায় প্রথম বারের মতো রচিত এ ব্যাকরণ গ্রন্থটি রচনায় প্রমিত বাংলা বানান বিশেষজ্ঞ, বাংলা বানান নিয়ে একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা ও শুদ্ধ বানান চর্চা
মিনহা সিদ্দিকা, প্রবন্ধের লেখিকা
গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. মোহাম্মদ আমীন যে শ্রম ও মেধা দিয়েছেন তা তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।গ্রন্থটি বাংলা শেখায় আগ্রহী যে কোনো ব্যক্তির সংগ্রহে রাখা ও থাকা উচিত। এটি শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, বরং যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদেরও উপযোগী একটি অনবদ্য ব্যাকরণ। আমরা বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।

Wednesday 29 June 2016

বিশিষ্টার্থক শব্দ / ড. মোহাম্মদ আমীন



wewkóv_©K kã Kx
wewkóv_©K kã I evK¨vsk¸‡jv‡K Bs‡iwR fvlvq Idioms and Phrases ejv nq| Oxford Dictionary Abyhvqx Idiomos A_© Form of Expression peculiar to a language. evsjvq ejv hvq : wewkóv_©K kã I evK¨vsk| wewkóv_©K kã wewfbœ cÖKvi n‡Z cv‡i| †hgb : wµqvevPK, we‡kl¨ I we‡klYevPK cÖf…wZ| AwaKvsk wewkóv_©K kã Am¤ú~Y© A_©evPK| Giv Ab¨ k‡ãi m‡½ hy³ n‡q ev ev‡K¨ cÖ‡qv‡Mi ci wewkó A_©evPKZv m„wói gva¨‡g m¤ú~Y© evK¨ MVb K‡i| GRb¨ wewkóv_©K kã‡K evK¨vskI ejv nq| m¤ú~Y© ¯^vaxb evK¨ bq e‡j, evK¨vsk ev wewkóv_©K kã Øviv g‡bvfve c~Y©fv‡e cÖKvk Kiv hvq bv| A‡bK‡ÿ‡Î Giƒc wewkóv_©K kã AvcvZ`„wó‡Z †h A_© cÖKvk K‡i, †m A‡_© k㸇jv †ewki fvM †ÿ‡Î e¨eüZ nq bv| †hgb : ÔwZwb Avgv‡K GK Møvm †Nvj LvB‡q w`‡q‡QbÕ, Avi ÔwZwb Avgv‡K †Nvj LvB‡q w`‡q‡QbÕ- G `ywU ev‡K¨i A_© m¤ú~Y© wfbœ|

wewkóv_©K k‡ãi msÁv_© :
†h kã ev c`mg~n wewkó A_© cÖKvk K‡i ev wewkó A_© cÖKv‡k e¨eüZ nq, †mme kã‡K wewkóv_©K kã ejv nq| †Kv‡bv kã ev kã mgó hLb ev‡K¨ e¨eüZ n‡q A‡_©i w`K n‡Z †Kv‡bv bv †Kvbfv‡e ˆewkó¨gq n‡q I‡V, ZLb †mme c`‡K wewkóv_©K c` ejv hvq| Avevi, AvÿwiK A_© Qvwc‡q hLb †Kv‡bv kã ev k㸔Q we‡kl A_© cÖKvk K‡i †mme kã ev k㸔QI wewkóv_©K kã bv‡g cwiwPZ| Ggb wKQz wKQz kã ev‡K¨ e¨eüZ nq †h¸‡jvi A_© m¤ú~Y© evK¨wU covi c~‡e© ejv hvq bv| †m¸‡jvI wewkóv_©K kã wnmv‡e cwiwPZ| †hgb : Aa©P›`ª A_© A‡a©K P›`ª| wKš‘ ev‡K¨ em‡j ÔAa©P›`ªÕ-Gi A_© n‡q Mjvav°v †`Iqv|

wewkóv_©K k‡ãi cÖKvi‡f` : cÖK…wZ, AvPiY, A_© wKsev evK¨vs‡ki MVb we‡ePbvq ˆeqvKiYMY wewkóv_©K kã‡K K‡qKwU †kÖwY‡Z wef³ K‡i‡Qb| h_v : (1) mgv_©K kã, (2) wfbœv_©K kã, (3) m‡gv”PvwiZ kã, (4) cÖvq m‡gv”PvwiZ kã, (5) evM&aviv cÖf…wZ|


wewkóv_©K k‡ãi Drm
wewkóv_©K k‡ãi A_© †hgb ˆewPΨgq, †Zgwb i‡q‡Q eûwea Drm| wb‡P wewkóv_© k‡ãi Drm D‡jøL Kiv n‡jv :
1. evsjv cÖev` : evsjv cÖev` wewkóv_©K k‡ãi Ab¨Zg Drm| Giƒc wewkóv_©K kã mvaviY gvby‡li AvjvcPvwiZv I mvwnZ¨K‡g© cÖev` n‡Z MÖn‡Yi gva¨‡g wewkóv_© kã wnmv‡e ¯^xK…wZ †c‡q‡Q| Gfv‡e m¤ú~Y© cÖev` n‡Z `y-GKwU kã wew”Qbœ K‡i eû wewkóv_©K kã m„wó n‡q‡Q|
2. K‡_vcK_b : cÖvZ¨wnK K‡_vcK_b I K_vevZ©vi ga¨ n‡Z A‡bK evK¨vsk wewkóv_©K kã wnmv‡e M„nxZ nq| hv cieZ©xKv‡j AviI e¨vcKZv jvf K‡i|
3.  †jvKmvwnZ¨ : evsjvi †jvK mvwnZ¨ wewkóv_©K k‡ãi Ab¨Zg Drm| bvbv †jvKKvwnwb n‡Z M„wnZ A‡bK evK¨vsk GLb wewkóv_©K kã wnmv‡e e¨eüZ n‡”Q|
4. cÖvPxb mvwnZ¨Kg© : cyw_, RvwiMvb, mvwiMvb, KweMvb, ZR©v, K_KZv, MÖvg¨Qov, MxZ, DcvL¨vb cÖf…wZ cÖvPxb mvwnZ¨Kg© wewkóv_©K kãfvÐvi‡K mg„× K‡i‡Q|
5. cyivY : fviZxq cyivY wewkóv_©K k‡ãi Avi GKwU weivU Drm| ivgvqb gnvfvi‡Zi A‡bK NUbv n‡Z A‡bK wewkóv_©K kã evsjvq G‡m‡Q| †hgb : AwMœcixÿv, AM¯ÍhvÎv, eKavwg©K, N‡ii kÎæ wefxlY cÖf…wZ|

gÄyfvl
K_vi kw³ Zievwii †P‡q cÖej| ejv nq, K_vi †P‡q †ewk Kó w`‡Z cv‡i Ggb †KvbI A¯¿ †bB| Avevi K_vi †P‡q †ewk kvwšÍ w`‡Z cv‡i Ggb cig e¯‘I c…w_ex‡Z †bB| G Rb¨ ejv nq, kãeªþ| A_©vr k‡ãi kw³ eª‡þi g‡ZvB Amxg| †KvbI wKQy †mvRvmywR eySv‡bvi Rb¨ †hgb kã Av‡Q †Zgwb kã Av‡Q Nywi‡q ejvi| †Kvb f`ª‡jvK AwcÖq K_v mn‡R †mvRvmywR ej‡Z Pvb bv| AwcÖq K_vwU hLb bv ej‡jB bq, ZLb †gvjv‡qg K‡i Nywi‡q e‡jb| Bs‡iwR‡Z kã Pq‡bi G †KŠkj‡K Euphemism ejv nq| evsjvq G †KŠkj‡K gÄyfvlY e‡j| Aa¨vcK k¨vgvcÖmv` PµeZ©x Zuvi †jLv AjsKvi Pw›`ªKvq cÖ_g gÄyfvlY kãwU e¨envi K‡ib| gÄyfvlYI wewkóv_©K k‡ãi AšÍf©y³|

gÄyfvl I wewkóv_©K kã
Rvgv‡bi eÜy iweb Pywi K‡i| eo j¾v nq Rvgv‡bi wKš‘ KvD‡K ej‡Z cvi‡Q bv, iweb Pywi K‡i| ejj : iwe‡bi nvZUv‡bi Af¨vm Av‡Q| G ÔnvZUvbÕ Gi A_© Pywii Af¨vm| evRv‡i hvevi mgq ¯¿xi KÉ: Pvj evošÍ, gv‡b evwo‡Z Pvj †bB| Pvj †bB ejv j¾v I `vwi`ª¨ cÖKvkK| ZvB evošÍ| wf¶yK wf¶v PvBj, bv w`‡q ejv n‡jv : gvd Ki| c¨v‡KUUv GwM‡q w`‡Z Awdmvi ej‡jb : bv, bv Avwg Nyl LvB bv| Nyl`vZv webq weMwjZ K‡É ej‡jb, †K e‡j m¨vi Nyl| fvexi Rb¨ GKUv kvwo Avi ev”Pv‡`i Rb¨ wKQy wgwó wK‡b †b‡eb| †mw`b Avcbvi evmvq wKQz wb‡q †h‡Z cvwiwb|

wbwk gv‡b ivZ, KzUzg gv‡b †gngvb| Zv n‡j wbwkKzUg gv‡b nq iv‡Zi †gngvb| wKš‘ wbwkKzUg ej‡Z iv‡Zi †gngvb eySvq bv, †Pvi eySvq| Z‡e iv‡Z †h †gngvb Av‡m bv Zv bq| iv‡Z †gngvb G‡jI Zv‡`i †KD wbwkKzUzg e‡j bv| gÄyfvl‡Yi G cªwµqvq †Pvi‡K e‡j wbwkKyUy¤^| Bs‡iwR‡Z †Pvi‡K f`ªZv K‡i ejv nq †dqvi †UªWvi, PvKwi †_‡K wWmwgm‡K ejv nq †Mv‡ìb n¨vÛm¨vK, Avwj© wiUvqvig¨v›U ev Avwj© wiwjR|

cY¨vw`i `v‡gi †¶‡Î gÄyfvlY Z_v wewkóv_©K k‡ãi cÖ‡qvM †`Lv hvq| evRv‡i Av¸b †j‡M‡Q, mwZ¨Kvi Av¸b bq; wRwbmc‡Îi `vg †e‡o †M‡Q| GwU gvby‡li Avw_©K Ae¯’v‡K Pigfv‡e dzwU‡q †Zv‡j| Avi GKUv gÄyfvlY, Qqjvc Gi A_© †e‡o †M‡Q Ggb| evRv‡i GLb mwâi Qqjvc| nvwg`vi ¯^vgx †Kivwb, wKš‘ GwU ej‡Z j¾v K‡i, Avevi wg_¨v ejvI wVK bv| nvwg`v Zvi ¯^vgx Kx K‡i Rvb‡Z PvB‡j e‡jb, Kjg †clvi PvKwi K‡ib| gv‡b Awd‡m †jLv‡jwL K‡ib| ÔcÖK…wZi Wv‡K mvovÕ gv‡b ev_iæ‡g hvIqv| Bs‡iRiv Zv‡`i †Pv‡L hviv gvivZ¥K Acivax Zv‡`i nq‡Zv duvwm w`‡Zb bq‡Zv ev `xcvšÍi| `xcvšÍi‡K gÄyfvl‡Y ejv nZ Kvjvcvwb| cvwbi †Kvb is †bB| ZvB cvwb Kv‡jv n‡Z cv‡i bv, wKš‘ `xcvšÍ‡ii cvwb Kvjv ev Kv‡jv| jvjcvwbI Av‡Q, †hgb g`¨ ev A¨vj‡KvnjRvZxq cvbxq| Avgiv mPiviP †hUv cvb Kwi †mwU mv`vcvwb| Avm‡j Kx GUv mv`v? bv, G¸‡jvB gÄyfvlY ev wewkóv_©K kã| AvRKvj †hUv e„wË Av‡M †mUv‡K ejv n‡Zv Rjcvwb| Lye PgrKvi gÄyfvlY|

wewkóv_©K k‡ãi cÖ‡qvRbxqZv, e¨envi I ¸iæZ¡
c„w_exi cÖ‡Z¨K fvlvq wewkóv_©K k‡ãi bvbvwea e¨envi I ¸iæZ¡ i‡q‡Q| myi, Q›` Avi cÖvK…wZK jv‡m¨ we‡gvwnZ evsjv fvlvi †ÿ‡Î Gme k‡ãi ¸iæZ¡ AviI A‡bK †ewk| evsjv fvlvq wewkóv_©K k‡ãi cÖ‡qvRbxqZv, e¨envi I ¸iæZ¡ wb‡P D‡jøL Kiv n‡jv :
1. K_vevZ©v ev †jLvi mgq ev‡K¨ g‡bvMÖvnx I hyZmB kãm¾vq mw¾Z K‡i e³e¨‡K AvKl©Yxq K‡i †Zvjv| †hgb : †Pv‡ii gv‡qi eoMjv, KvbcvZjv, AwMœcixÿv

2. ev‡K¨ GKB c` evi evi e¨envi Ki‡j †h GK‡N‡qwg I †mŠ›`h©nxbZvi D™¢e N‡U, wewkóv_©K kã cÖ‡qv‡Mi gva¨‡g Zv `~ixf~Z K‡i evK¨‡K ˆewPΨgq K‡i †Zvjv| †hgb : wgbnv fv‡jv †g‡q, †m fv‡jv MvB‡Z cv‡i| MwYZ I weÁv‡bI †m fv‡jv| G evK¨¸‡jv‡K hw` †jLv nq : wgbnv fv‡jv †g‡q, †m PgrKvi MvB‡Z cv‡i| MwYZ I weÁv‡bI †m `ÿ|Ó Zvn‡j g‡bvfve cÖKv‡k ev‡K¨i †mŠ›`‡h©i AviI kÖxe„w× N‡U|

3. we‡klY‡K bvbv Avw½‡K cÖ‡qvM K‡i e³vi Av‡eM Ges †kÖvZvi kÖe‡Y”Qvi kÖxe„w× NUv‡bv| †hgb : †n gnvb, †n gvb¨ei, †n kÖ×v®ú` cÖf…wZ|

4. †Kv‡bv k‡ãi e¨env‡i mvavi‡Y †Kv‡bv Abxnv ev Ab¨wea †Kv‡bv ms¯‹vi ev AcÖxwZKi Abyl½ wKsev AevwÂZ g‡bvfve _vK‡j Zv wZ‡ivwnZ Kivi Kv‡R wewkóv_©K k‡ãi eûj cÖ‡qvM †`Lv hvq| †hgb : ÔN‡i Pvj †bBÕ K_vwU w`‡q Afve ev AevwÂZ g‡bvfve cÖKvk bv-K‡i ejv nq ÔN‡i Pvj evošÍÕ| Avgiv mvaviYZ wfÿz‡K wfÿv bv-w`‡j ewj gvd Ki| GUvI wewkóv_©K kã|

5. g‡bvfv‡ei Av`vb-cÖ`vb ev †hvMv‡hv‡Mi †ÿ‡Î fvlvi †mŠ›`h© iÿv Ges fve cÖKv‡ki e¨vcKZv‡K wbweo K‡i †Zvjvi Kv‡R wewkóv_©K k‡ãi Rywo †bB| †hgb : ÔZvi fv‡jvg›` †eva †bBÕ evK¨wUi †P‡q ÔZvi KvÐÁvb †bBÕ evK¨wU fvecÖKv‡ki e¨vcKZv‡K AviI wbweo K‡i|

6. wewkóv_©K kã e¨env‡ii gva¨‡g cici kã mw¾Z K‡i evK¨ I fvlv‡K Q‡›`ve× K‡i †Zvjv hvq| †hgb : GKRb QovKvi GKwU Qovi cÖ_g jvB‡bi ÔQweÕ k‡ãi cwi‡cÖwÿ‡Z Ôm~h©Õ‡K we‡klvwqZ Ki‡Z PvB‡Qb| G‡ÿ‡Î QovKv‡ii Ôm~h©Õ c` e¨envi Kivi †Kv‡bv my‡hvM †bB| Zv‡K e¨envi Ki‡Z n‡e ÔiweÕ| †Zvgvi Qwe/ †fv‡ii iwe|

7. Qov ev KweZvq Q›` AšÍ¨wgj iÿvi Rb¨ wewkóv_©K k‡ãi eûj e¨envi jÿYxq| Mjv †Wvev evwi, †Kg‡b hve evwo| G PiY `y‡Uv‡Z evwo c‡`i m‡½ Rj Avb‡Z n‡j Rj Gi mgv_©K kã ÔevwiÕ Avb‡ZB nq|

8. kÖ×v, †¯œn, Av`i, fv‡jvevmv cÖf…wZ üw`¨K g‡bvfv‡ei c~Y©cÖKv‡k wewkóv_©K k‡ãi †Kv‡bv weKí †bB| †hgb : evev Zzwg Avgvi cÖvY| G evK¨ w`‡q ejv n‡”Q evev †Zvgv‡K Avwg Avgvi wb‡Ri cÖv‡Yi g‡Zv fvjevwm| †Zgwb : †mvbv Avgvi, j²x, gnvgwng cÖf…wZ|
9. k‡ãi g‡a¨ AbycÖvm, e¨Äbv, nvm¨im, wØav cÖf…wZ Avbvi Rb¨ wewkóv_©K kã e¨eüZ nq| †hgb : †hgb : -KwU KvR K‡iv †h, KwU e¨v_v Ki‡e! G ev‡K¨ cÖ_g ÔKwUÕ A_© KqwU Ges wØZxq ÔKwUÕ A_© †Kvg‡oi Ask|

Tuesday 2 February 2016

আমার বন্ধু হারুন/ ড. মোহাম্মদ আমীন

হারুন। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ছেলে। আকর্ষণীয় অবয়বে নিদাঘ বসন্তের মতো একজন পরিপূর্ণ মানুষ। সে আমার বন্ধু, ত্রিশ বছরের অবিরাম সখ্যতা বাংলাদেশ-আমেরিকার বিশাল দূরত্বও কমাতে পারেনি। এর কৃতিত্ব আমার নয়,
আমার বন্ধু হারুন
পুরোটাই তার। অনেক দিন পরও সে আমাকে খুঁজে নিয়েছে, ভুলে যা্য়নি। তাই আমি ভাগ্যবান, হারুনের মতো আমার একজন বন্ধু আছে। হারুনের মতো বন্ধু সহজে পাওয়া যায় না।হারুন, প্রথম পরিচয়ের মতো এখনও নির্মল হাসিটা তার অক্ষুণ্ণ আছে দিনের মতো। জ্যোস্নার মতো নিপাট স্নিগ্ধতায় মায়াভরা চোখে আদুরে আহবান লেগেই থাকে। তার লালিত্যে শিশুর মতো সারল্য, রূপোলি বিকেলের মতো উদার প্রগলভতায় জড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির মতো নিবিড় ভালবাসা। মোহমুগ্ধ একটা অনাবিল সৌন্দর্য সবসময় লেগে থাকে হারুনের মুখে, সারা অবয়বে।আমি অবাক
হারুনকে উৎসর্গিত আমার বই
হয়ে উপভোগ করি তার সব। ছোট ছোট কথায় আনন্দের ফোয়রা, নিটোল নিটোল কৌতুকে ঝরে পড়ে রাসি রাসি হাসি। মুহূর্তে জমিয়ে তুলতে পারে আড্ডা। স্মৃতিচারণেও সে জুড়িহীন। কত কথা ভুলে গিয়েছি কিন্তু সে ভুলেনি। সে-ই ত্রিশ বছর কী কম! তার কিন্তু স্মৃতি এখনও তরুণ, তরতাজা। সুখের সময়গুলোকে অতীত থেকে কাছে নিয়ে আসতে পারে কোনো সচেতন প্রয়াস ছাড়া। অতীত আর বর্তমানের সেতুবন্ধনে সময়গুলোকে বিলাসী মগ্নতায় আপ্লুত করে দেয়। হারুন, চিরদিন এমনই থেকো।
হারুন ফর্সা, লম্বা, ছিমছাম শরীর বেতের মতো সটান। অনেকটা শ্বেতাঙ্গের মতো। মুখ গোল নয়, তবে গোলাকার, অনেকটা আরবীয় ধাচ। হয়তো, তার পূর্বপুরুষ ছিলেন আরবীয় কেউ। অবশ্য আমি এ নিয়ে কখনও আলাপ করিনি। তবে আমার মনে হয়, হারুন আরবীয় রক্তজাত। চামড়ার মতো মনটাও তার ধবধবে। নিখুত, নিষ্পাপ। কখনও মুখ হতে কারও বিরুদ্ধে মন্দ বাক্য বের করে না। 
সে ধার্মিক কিন্তু গোঁড়া নয়। নিজের নীতি-আদর্শে অটল, তবে অন্যের মতাদর্শকে আঘাত করে সরাসরি কাউকে কষ্ট দিতে কখনও দেখিনি। মেনে নেওয়ার অদ্ভুদ ক্ষমতা তার মজ্জাগত। কখন কোথায়  এবং
 হারুন, হারুনের দুই কন্যা, এক মেয়ে ও বউ
কী করতে হবে, খুব বিবেচনা করে সম্পাদন করে। পরিচিতদের কাছে তাই সে একজন আগ্রহের মানুষ।তার সঙ্গে কথা বললে, তাকে আপন করে নিতে উদগ্রীব না হয়ে পারে না। আমেরিকার মতো দেশে থেকেও প্রতিবেশি ও বাঙালিদের বিপদে, সংকটে আর প্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসে। কোনো প্রতিদান আশা করে না। এমন মানুষ কয়জন আছে? 
হারুন রাগে কিন্তু আমি বলি, রাগে না। মানে কখন কোথায় কতটুক এবং কেন রাগ করা  প্রয়োজন ঠিকঠাক বুঝে নিতে পারে। তাই আবার পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। আমি এমন খুব কম মানুষে দেখেছি। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা মানে নিজের পাশব নিকৃষ্টতাতে জবাই করতে পারার মতো কঠিন কাজ।এটিই আসল কোরবানি। এমন যারা পারে, তারাই আদর্শ মানুষ। তাই আমি বলি, হারুন একজন আদর্শ মানুষ। অমায়িকতা মানুষের সহজাত গুণ হলেও সহজে এটি পরিস্ফুট করা যায় না। অনেকে পারে না। পশুর মতো মানুষের মনে পাশবতা ভীড় করে নানা কারণে। কিন্তু হারুন পারে এবং খুব সহজে পারে। তার কাছে সহজে পাশবতা ভীড়তে পারে না, ভীড়লেও জয়লাভ করতে পারে না, মানবতাই বিজয়ী হয়। প্রকৃতির মতো লাস্যে বিরাট হাসি দিয়ে অমায়িকতাকে অকৃত্রিম বন্ধনে পরিণত করার বিরল গুণ
হারুন ও হারুনের স্ত্রী
হারুনের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার এগুণ আমাকে মুগ্ধ করে, শুধু আমাকে কেন, অনেককেই করে।বন্ধুত্ব কী এবং তাকে কীভাবে লালন করতে হয়, তার অনেক কিছু আমি হারুনের কাছ থেকে শিখেছি।
আমার কোলে হারুনের ছোট কন্যা
হারুন এখন আমেরিকায় থাকে। মাস্টার্স করে আমেরিকা চলে গিয়েছে। ভালোই করেছে, এ দেশে থেকে কী হতো! সারাক্ষণ নিরাপত্তহীনতা, চিন্তা আর সংঘর্ষ। নিউজার্সির প্রাণকেন্দ্রে সবুজ অবগুণ্ঠে সুন্দর একটা বাড়ি করেছে। সুন্দর বাড়ি মানে শুধু ইটপাথর নয়। পুরো পরিবারই নিউজার্সির প্রকৃতির মতোই নির্ঝর- হাসি, আনন্দ আর সম্প্রীতিতে ভরপুর। দীর্ঘদিন আমেরিকায় থেকেও নিজের ভিত্তি সংস্কৃতি হতে একটুও সরে আসেনি সে। তার পরবর্তী প্রজন্মের কথা এখনও বলার সময় আসেনি। সেটি তাদের বিষয়। হারুন প্রত্যেকের স্বাধীনতায় শুধু বিশ্বাসী নয়, আকণ্ঠ নিঃশ্বাসী। কোনো কাজে তার বিরক্তি নেই, থাকলেও তা প্রকাশ না করে হাসিমুখে মেনে নেওয়ার অভাবনীয় ধৈর্য তার আছে। এমন গুণ অর্হাজন করা খুব কঠিন, লালন করা এবং প্রয়োগ করা আরও কঠিন।
হারুনের বউ আমার ‘হারুন ভাবী’ হলেও আমি ডাকি ছোট বোন। তিনি তো অতুলনীয়া। জন্ম নিয়েছেন আমেরিকায়, লেখপড়াও আমেরিকায় কিন্তু পুরো বাঙালি। তিনি উচ্চশিক্ষিত অথচ দেখলে মনে হয়, একজন সহজ-সরল বাঙালি মেয়ে। কথা বললে মনে হয় - বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের সবুজে বেড়ে ওঠা মাতৃভূমির পরশ। তিনিও ধার্মিক কিন্তু ‍উদার। ধর্ম অনেককে গোঁড়া করে দেয়, আশ্চর্যের
নিউইয়র্ক টাইমস অফিসের সামনে আমি ও হারুন
বিষয়, হারুন আর তার বউকে করেছে উদার। তাই তাদের ধর্ম একান্ত  নিজের হয়েও সার্বজনীন। তিন কন্যা তার, আমি বলি দুই কন্যা এক মেয়ে। সুযোগ পেলে ভাবী আর তিন সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন ঘুরেতে, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ- - -। এমন খুব কমজনই করতে পারে, কিন্তু হারুন করে। তার দুই কন্যা ও এক মেয়ে তার বন্ধুর মতো। 
হারুন একজন ভালো মানুষ, ভালো স্বামী, ভালো পিতা,
হারুনের উপজেলা আনোয়ারায়
আমেরিকায় থেকেও পরিপূর্ণ বাঙালি, ধার্মিক হয়েও অসাম্প্রদায়িক, সর্বোপরি একজন সহানুভূতিশীল বন্ধু। একজন আদর্শ মানুষ হতে হলে এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না। তাই হারুন একজন আদর্শ মানুষ। তার বন্ধুত্বে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার ‘দাপ্তরিক প্রমিত বাংলা বানান নির্দেশিকা’ বইটা হারুনকে উৎসর্গ করেছি। তবে এখনও পাঠাতে পারিনি। আর কী দিতে পারি তাকে! আদর্শ মানুষের প্রতিভূ হারুন সবসময় ভালো থাকবে, যে কোনো অবস্থায়।

Friday 29 January 2016

মৃত্যুঞ্জয়ী আহমদ ছফার করুণ মৃত্যু / ড. মোহাম্মদ আমীন

মৃত্যুঞ্জয়ী আহমদ ছফার করুণ মৃত্যু
======================
২০০১ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ জুলাই, সম্ভবত সকাল ১০.৪৫ মিনিটের ঘটনা। ফোন করেছেন ছফা। 
বললেন : কয়েকদিন আগে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেম, আমাকে পরীক্ষা করে ডাক্তারের ভালো মনে হয়নি। জটিল রোগ, ভুগতে হবে নাকি অনেকদিন। ভালোভাবে চিকিৎসা না হলে না-ও বাঁচতে পারি। জানো, নাম শুনে আমার, ডাক্তার সাহেব ফি-টাও নেয়নি! লাইনেও দাঁড়াতে হয়নি। এখনও লেখকের দাম আছে সমাজে, বুঝলে? আমার বইয়ের কোনো প্রকাশক হলে ফি নিয়েই ছাড়ত। বলত : ছফা ভাই ত্রিশ কপি বইয়ের রয়্যালটি পাবেন না, চিকিৎসা ফি বাবদ কেটে নিলাম। 
কী বলেছেন ডা্ক্তার? 
তাড়াতাড়ি নাকি অপারেশন করাতে হবে। বার বার করে বলে দিয়েছে। ফি এর বদলে একটা সিগারেট দিতে চেয়েছিলাম। নেয়নি, হেসেই ফিরিয়ে দিয়েছে ডাক্তার। বলল : ছফা ভাই আমি নন-স্মোকার। 
রোগটা কী? 
ফুসফুস নাকি ছাই হয়ে গেছে প্রায়, দ্রুত অপারেশন ছাড়া নাকি বেশিদিন বাঁচব না। বেশিদিন বাঁচলে আরও কয়েকটা বই লিখতে পারব। ডাক্তার আমাকেও নন-স্মোকার হয়ে যেতে বলল। 
আপনি কী বললেন? 
ওয়াল্লা, আমি কীভাবে সিগারেট ছাড়ব? ঔষধের সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটও চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমার রোগ শরীর থেকে খাটে, খাটের খুঁটি বেয়ে বাসার মেঝে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বাথরুমে যেতেও কষ্ট হয়। তেলেপোকার দল নাকে সুড়সুড়ি দেয় সুড় দিয়ে।হাত দিয়ে সরাতেও পারি না। মাছির কথা না-হয় বাদই দিলাম। মানুষ বন্ধুরা যত দূরে সরে যাচ্ছে পোকামাকড়গুলো তত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, কাছে আসছে। এটা কি তাহলে মানুষ হতে চিরকালের জন্য দূরে চলে যাওয়ার ঈঙ্গিত? 
এখন আপনি কেমন আছেন? 
বিছানা থেকেও ওঠতে কষ্ট হয়। কফ-কাশি সব ছাদরেই ফেলি, কম্বলেই মুছি। গ্লাসে জল ঢালতেও কষ্ট হয়, সিগারেট জ্বালাতেও কষ্ট হয়। তবু না করে উপায় নেই।
সিগারেট আর টানবেন না।
সিগারেট আর জল- এ দুটো না-খেয়ে উপায় নেই। পুরো বাসাটা আমার মতো নিজের মাঝে অদ্ভুদভাবে অন্তর্মুখী হয়ে গেছে।বারান্দায় গাছের যে পাতাটা এক মাস আগে পড়েছে, এখনও সেটা সেখানে রয়ে গেছে। পরিষ্কার করার কেউ নেই। পাতাটা হয় বাতাসে উড়ে গেছে বা পঁচে গেছে, নয়তো শুকিয়ে গেছে। তুমি এলে গন্ধে ঢুকতেই পারবে না বাসায়। এজন্য হয়তো তোমরা, লেখকেরা আর আগের মতো আড্ডা দিতে আস না।সিগারেট কেনারও লোক পাই না।চায়ের পাতা কেনার লোকও কমে গেছে। বইগুলো ছাড়া আমার আর কেউ নেই।ওগুলোও এখন সুপ্ত, মরার পর জেগে ওঠবে হয়তো জীবনানন্দের কাব্যের মতো।হেমচন্দ্রের মতো তখন আমার জন্য সবাই হাহুতাশ করবে। আমি কাশতে পারি কিন্তু লিখতে পারি না। কাশতে, লেখার জন্য বেশি শক্তি ক্ষয় করতে হয়। তবু কাশতে পারি কিন্তু লিখতে পারি না কেন?
পারবেন। 
দেখিও মরার পর আমার বই কীভাবে বিক্রি হয়, আমি কত জনপ্রিয় হই। তখন রয়ালটি নেওয়ার জন্য ঝগড়া করবে আমার ভাতিজারা। 
আপনার বন্ধুরা আসেন না? 
এখন আমার কাছে তেমন কেউ আসে না। মাঝে মাঝে কয়েকজন আসে। তারা আমার কাশি আর শরীরের অবস্থা দেখে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে চলে যায়। এমন দুর্বল শরীরে ডাক্তারের কাছে যাওয়াও সম্ভব নয়। কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়েও যায় না। আমিও বলি না। মরব, তবু কারও কাছে ছোট হব না। আমি তাদের কাছ থেকে এটুকু স্বতঃস্ফুর্ত কিছু সেবা আশা করতে পারি না? 
অবশ্যই পারেন। 
আমি থাকি পাঁচ তলায়, তুমি জানো বাসায় লিফট নেই। অ্যাজমা রোগী আমি, ভাতিজারাও অ্যাজমায় ভুগছে। বুঝতে পারে- উঠতে-নামতে কী কষ্ট আমার হয়। আগে যারা ঘন ঘন আসত এখন তাদের রিং করেও আনা যায় না। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। লিফট ছাড় পাঁচ তলায় ওঠা আসলেই কষ্টকর।
আপনার ভাতিজা, যে আপনার সঙ্গে থাকত সে কোথায়? 
চাকরি পাওয়া পর্যন্ত কাছে ছিল। এখন চাকরি পেয়েছে। চাকরির পর পেয়েছে বউ; তারপর? তারপর আর কি, দুটো নিয়ে এখন শনির আখড়ায় একটা বাসা নিয়ে থাকে। বউটাও চাকরি করে একটা স্কুলে। চাকর হতে চাকরি, কত বাধ্যবাধকতা, আসবেই বা কী করে! এজন্যই তো আমি চাকরিই নিইনি।থাক ওসব। 
ইদ্রিস? 
সে-ই কেবল ভরসা ছিল, ভালো ডাল রাঁধত, ভালো বাজার করত। তুমি তো আমার বাসায় ইদ্রিসের রান্না অনেকবার খেয়েছ। দারুণ রাঁধত। মাথাটাও টিপে দিত মাঝে,মাঝে পাগুলোও। তাকে অনেকদিন বেতনটাও দিতে পারছিলাম না। কয়জনকে বলব, কতবার বলব? যারা টাকা দেওয়ার কথা, তারা দেয় না। লেখা ছাড়া তো আমার আর কোনো পেশা এখন নেই। যখন ছিল তখন তো কিছু সঞ্চয় করিনি। হেমচন্দ্রের মতো সবাইকে বিলিয়ে দিয়েছি। 
ইদ্রিস কী চলে গেছে? 
ইদ্রিসকে আমিই চলে যেতে বলেছি। বলা যায়, বাধ্য করেছি। সে যেতে চায়নি। বললাম, চলে যাও। অন্য কোথাও কাজ দেখ, তুমি তো আর আমার মতো চিরকুমার নও।তোমার ছেলেপেলে আছে, সংসার আছে।
প্রকাশকগণ? যারা আপনার বই বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন?ওরা টাকা দেন না, আসেন না?
ওয়াল্লা, ফোন করলেও ধরে না অনেকে।ধরলেও এমনভাবে কথা বলে, যেন আমি একটা বোঝা, আমাকে ফেলে দিতে পারলে বাঁচে। আসলে প্রকাশকগণ ইচ্ছে করেই, লেখকের জীবদ্দশায় বইয়ের বহুল প্রচার করে না। তাহলে যে, কিছু রয়্যালটি বেশি দিতে হয়। অনেক বার বলার পর কয়েকজন প্রকাশক, পিয়ন দিয়ে সামান্য কিছু পাঠায়, এমনভাবে পাঠায় যেন, আমি তাদের অনুগৃহিত। অসহায়ের প্রতি বাধ্যগত অনুগ্রহের মতো নিষ্প্রাণ ও নিষ্ঠুর টাকাগুলো তবু নিতে হয়। হাজার হোক টাকা, সিগারেট কেনা যায়, ঔষধ না-ই বা কিনলাম। 
ঔষধ তো খেতেই হবে। 
ডাক্তারের কাছে যাওয়া বড় প্রয়োজন, তবে শরীরের জন্য পারছি না। নেওয়ার কেউ নেই, গাড়ি দূরে থাক, একটা রিক্সা পর্যন্ত আমার নেই। একজন ডাক্তারকে বাসায় আসার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।ডাক্তার আসে না।তার কাছেই যেতে হবে আমাকে। অবশ্য রুই-কাতলা হলে আলাদা কথা ছিল, আমি তো চুনোপুটি। ফি দিতে পারব না, ডাক্তারও পারবে না নিতে। কেন আসবে ডাক্তার? 
কী বলেছেন ডাক্তার? 
আগের ঔষধগুলো নিয়মিত সেবন করার উপদেশ দিয়েছেন। অপারশেনটা করাতে পারলে নাকি পুরো ভালো হয়ে যাব, একদম যুবকের মতো আবার সিড়ি বেয়ে তর তর করে উঠতে পারব। তবে তাড়াতাড়ি করাতে হবে।অনেক টাকা লাগবে, তুমি জানো অপারেশন করতে কত টাকা লাগে? আমি শুনেছি, এমন অপারেশনে নাকি কয়েক লাখ টাকা লাগে? ওয়াল্লা, এত টাকা আমাকে দেবে কে? থাক, অপারেশনে আমার বড় ভয়। বরং এভাবেই যাক, ঔষধ খেলেও নাকি ভালো হয়ে যাব। 
নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছেন তো?
ঔষধ কিনতেও তো টাকা লাগে। ফার্মাসিস্ট আমাকে চেনে না।তার কাছে ছফার চেয়ে একটা কয়েন অনেক মূল্যবান। কয়েন ঝনাৎ করে লাফিয়ে ওঠে পাথরের মেঝে পড়লে। আমি পড়লে ধপাস শব্দ ছাড়া আর কিছু হবে না, লাফিয়ে ওঠতে পারব না কয়েনের মতো। আগের মতো গর্জে ওঠতে পারি না।কলম দূরে থাক সিগারেটটাও মুখে আনতে কষ্ট হয়। পারলে একবার দেখতে এস বাবা। 
আসব, খুব তাড়াতাড়ি আসব। 
আমি খুব অসুস্থ, শুধু আমি নই, পুরো বাসাটা অসুস্থ। 
‘টাকা প্রয়োজন’ ফোন করে এটাই বলতে চেয়েছিলেন ছফা।মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে।আমি তখন চকরিয়া, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট। গুরুত্ব দিয়েও কাজের চাপে গুরুত্বহীন হয়ে যায় ছফা; ছফার কথা। পরদিন ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসা হয়নি জরুরি কাজে, সরকারের পালাবদলের রিহার্সেল, সার্কিট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ সভার আয়োজন করা হয়। তারপর দিন আর একটা, পরদিন আর একটা। এভাবে কাজে কাজে ভুলেই যায় ছফার কথা। সাত-আট দিন পর ফোন পাই, ছফা নেই। কাজের ছুটা-বুয়া খবর দেয়, সে-ই সবাইকে ডেকে আনে।
কী বলো! ছফা নেই? 
তেল ছিটছিটে পুরানো কাথার ওপর নিথর হয়ে পড়ে আছে ছফার দেহ।হাতের অর্ধদগ্ধ সিগারেট আঙুল পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে, তবু ঘুম ভাঙেনি ছফার। চারিদিকে ময়লা কাপড়ের স্তুূপ, বিছানায় স্ট্রে, বাদামের খোসা, সিগারেটের ছাই, চানাচুরের গুড়ো, সিগারেটের প্যাকেট, পোকা-কিলবিল স্যুপের দুটো বাটি, চারিদিকে চষে বেড়াচ্ছে তেলেপোকার দল। বালিশের পাশে আমের আধচোষা দুটি আঁটিও ছিল।পুরো মেঝে সিগারেটের টুকরো।ঝাঁকঝাঁক মাছি আর সারি সারি পিঁপড়া অভিবাদন দিচ্ছে ছফার নিথর দেহে। তারা নাক দিয়ে ঢুকছে, কান দিয়ে বের হচ্ছে। 
ছফা নেই। 
ছফা মারা গেছেন। টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারেননি ছফা, অপারেশন করাতে পারেননি, বিনা চিকিৎসায় হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের মতো ধুকে ধুকে মরে গেছেন। যে ছফা শরীরকালে হাজার হাজার লোকের উপকার করেছেন, হুমায়ুন আহমদসহ আরও অনেক লেখকের বই প্রকাশে সহায়তা করেছেন, সে ছফাকে ঢাকার বুকে, তার অর্থে বিখ্যাত ও কোটিপতি হওয়া লেখকদের সামনে বিনা চিকিৎসায় একা একা অসহায় অবস্থায় মরে যেতে হয়েছে। কেউ ছিল না অসুস্থ ছফার পাশে। 
ছফার মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পরের ঘটনা। 
বাংলা বাজারে ছফার এক প্রকাশকের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। নামীদামি প্রকাশক তিনি, ছফার অনেক বই ছাপিয়েছেন। এখনও ছাপিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে ছফার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। মাঝে মাঝে ছফার বাংলা মটরের বাসায় দেখা যেত তাকে।এখন শুধু তিনি নন, অনেক প্রকাশক ছফার বই ছাপান।তবে গোল বাঁধে ছফার ভাতিজাদের মধ্যে রয়্যালটি ভোগের ঝগড়া। এতদিন ছফার ছোট ভাতিজা আনোয়ার একাই সব রয়্যালটি নিতেন, এবার বড় ভাতিজা সিরাজও রয়্যালটির ভাগ চাইছেন। এ নিয়ে আলোচনা; মীমাংসায় সহায়তা করার জন্য প্রকাশক সাহেব আমাকে ডেকেছেন।ওই প্রকাশনা থেকে অবশ্য আমারও বই প্রকাশিত হয়েছে। 
কথাপ্রসঙ্গে বিখ্যাত ওই প্রকাশক বললেন : ছফা ভাই আজ বেঁচে থাকলে জানেন, আমি কী করতাম? 
কী করতেন?
ছফা ভাইকে ছয়তলা একটা বিল্ডিং বানিয়ে দিয়ে রাজার হালে রাখতাম।
লেখক পরিচিতি : ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ ও ‘আহমদ ছফা’ গ্রন্থের রচয়িতা।
খুবই প্রয়োজনীয় কয়েকটি লিংক : শুবাচ লিংক
শুবাচ লিংক/২
শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১
শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

Thursday 28 January 2016

বউ এবং বউ / ড. মোহাম্মদ আমীন


রাত দুটো।
অনেকের জন্য এটি গভীর, আমরা লেখকের জন্য সন্ধ্যা। মোবাইলে হঠাৎ রিং আসে। কম্পিউটারের পর্দা হতে চোখ এবং কি-বোর্ড হতে হাত সরিয়ে মোবাইলের পর্দায় দিই।জাফর রিং করেছে। কী ব্যাপার জাফর? এত রতে!: আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে। গেটটা খোল, শীতে মরে যাচ্ছি। রিক্সা ভাড়া দিতে হবে। পকেটে টাকা নেই। মানিব্যাগটা নিয়ে এসো।জাফর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নিচে নেমে রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে দিই। টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। জানুয়ারির শীত জানোয়ারের মতো চেপে ধরেছে জাফরে। তার পরনে লুঙ্গি, গায়ে টি শার্ট, পায়ে চপ্পল।মাধবীলতার মতো কাঁপছে।বললাম : আবার ঝগড়া হয়েছে বউয়ের সঙ্গে?সবার দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া হয়, তবে অন্যেরটা দেখে সবাই তৃপ্তি খোঁজে। এমন ভাব দেখায়, যেন ঝাগড়া কী জানেই না। আমিও তেমন একটা ভাব নিই। অবশ্য ঝগড়া হলেও আমি কারও বাসায় যায় না। বের করে দিলে ছাদে বা রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে। এসব বিষয় যত কম প্রকাশ করা যায় তত ভালো।বলো না কী হয়েছে?উত্তরে জাফর ঠোঁটে হাসি আনতে গিয়ে বিশাল এক দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে আমার দিকে তাকায়। বিষণœ চেহারা নির্যাতিত সংখ্যালঘুর মতো করুণ। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে কপোল বেয়ে কাঁধে। ধবধবে রঙের টসটসে চেহারাটা যেন ঝড়ে তছনছ সর্ষে ক্ষেত।জাফর আরও অনেক বার রাতে আমার বাসায় এসেছে। ঝগড়া হলেই বউ মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের করে দেয়। সোজা চলে আসে আমার বাসায়। হোটেলে যাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশের অনেক বড় অফিসার, আইজিও হয়ে যেতে পারে। রাতারাতি সব খবর চাউর হয়ে যাবে। অনেক আত্মীয়ও আছে ঢাকায়, তাদের ওখানেও যাওয়া সম্ভব নয়। সম্মান, ইজ্জত আরও কত কিছু - - -তবে এর আগে জাফরকে এমন বিমর্ষ দেখা যায়নি।বাসায় ঢুকি সন্তর্পনে, দরজা যেন আওয়াজ না-করে। আমারও বউ আছে, এখন সে ঘুমে, যদি জেগে যায়!মেয়েরা সব একই পিচ, তফাৎ কেবল ঊনিশ-বিশ।ঘরে ঢুকে একটা স্যুয়েটার হাতে দিয়ে বললাম : কী হয়েছে?কী আর হবে? ভালো লাগছিল না, তাই গল্প করতে চলে এলাম।তোমার মুখে এটা কীসের দাগ? বউ তোকে আবার মেরেছে? জাফর কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগে আবার বেজে ওঠে মোবাইল।মোবাইলের পর্দার দিকে তাকিয়ে বললম : তোমার বউ।জাফরের চেহারাটা আরও মলিন হয়ে যায়। কাঁপতে কাঁপতে আমার রিডিং রুমের সোফায় ধপাস করে বসে পড়ে।বলুন ভাবী?কোনোরূপ সম্ভাষণ ছাড়াই শুরু করেন জাফরের বউ : ভাই, হারামজাদাটা নিশ্চয় আপনার বাসায় গিয়েছে, জায়গা দেবেন না। ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন, আমিও বের করে দিয়েছি। যদি বাপের জন্মের হয়, সে আর বাসায় ফিরবে না। আপনি বলে দেবেন। ছোট লোকের বাচ্চা, জাফর নয়, মীরজাফর, ঘসেটি বেগমের  গোষ্ঠী। সাবধান! সে কিন্তু আপনার বাসাটাকেও ধ্বংস করে দেবে। এদেও বংশ হায়েনার  চেয়ে ভয়ঙ্কর। কুকুরের চেয়েও অধম, আকৃতিটা ছাড়া মানুষের কিছু  নেই। আমি তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করব, সব গোপন কথা ফাঁস করে দেব। তার ধ্বংসই আমার কামনা। অসভ্যটা একদিনের জন্যও শান্তি দেইনি। পুলিশের চাকরি করে আর খালি ঘুষ খায়। অফিস থেকে এসেই বলে, ভাত দাও। কেন? আমি ভাত দেব কেন? সে ভাই নিয়ে খেতে পারে না! আমি কী তার চাকরনী! ভাই আপনারাও তো অফিস করেন। কোনোদিন বউকে ভাত দিতে বলেছেন? ভাবী আপনার কত প্রশংস করে, বলে “আমাকে কোনোদিন ভাত দিতে বলে না, দিলে দিলাম না দিলে না-দিলাম”।  আমি কেন তাকে ভাত দেব? চাকর্নিরাই এসব করে। ভাই, ঘরে চাকর্নি রেখেও শান্তি নেই। আমার চেয়ে চাকর-বাকরদের প্রতি তার বেশি মায়া। কাজের বুয়াদের একটু বকাঝকা করলে দরদ উতলে ওঠে। বুঝি না, কেন এত দরদ। ভাই, যত তাড়াতাড়ি পারেন তাকে বিদায় করেন।ভাবী, জাফর ভাই তো - - -ভাই, আপনারাও তো সংসারে করেন, এমন তো হয় না, হয় কী? সে একটা জানোয়ার। বাপ ছিল ফকিন্নি, মা ছিল গ-মূর্খ। ভাইগুলো চাষাভূষা, বোনগুলো বেশ্যা। এমন জঘন্য পরিবারের ছেলে কীভাবে ভালো হয়? আমার মা-বাবা এমন নিকৃষ্ট পরিবারের একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে জীবনটা বরবাদ করে দিল। এতক্ষণে সে মনে হয় আমার বিরুদ্ধে অনেক আজেবাজে কথা বলে দিয়েছে। আমি কিন্তু ভাই বেশি কথা পছন্দ করি না। হারামির বাচ্চাটা মরে না কেন? সে যদি মরতো, বিশ্বাস করেন ভাই, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। মসজিদে শিরনি দিতাম। কত লোক রাস্তায় কতভাবে অ্যাক্সিডেন্টে মরে, সে কেন মরে না! কুত্তার বাচ্চা বাসায় আসুক, জিব কেটে ডাস্টবিনে ফেলে দেব। তাকে খুন করে আমি হাজতে যেতেও প্রস্তুত।- - - - - কৃপণের পুত - - -- ।কী হয়েছে ভাবী? আমি আবার জানতে চাইলাম।জাফর ভাবী : ঘটনা বললে তো ভাই আপনি আকাশ থেকে পড়বেন। যে কথা বলেছে, সেটা আপনার স্ত্রী যদি বলতেন, তাকে আপনি এতক্ষণে জবাই করে দিতেন। আমি তো কেবল ঘর হতে বের করে দিয়েছি।বলেন না ভাবী, কী বলেছে।জাফর ভাবী : নটির বাচ্চা - বলে কিনা আমি বেশি কথা বলি। -- -- -- ভাই আমি কি বেশি কথা বলি?না, না ভাবী, আপনি ভালো।জাফর মিয়া তো সেটা বুঝে না।ততক্ষণে আমার স্ত্রী চলে আসে। ভাগ্য ভালো, আমার মোবাইলের চার্জও শেষ হয়ে যায়। জাফরের দিকে তাকিয়ে হায় হায় করে উঠে আমার স্ত্রী : ভাই, আপনাকে কী এক কাপড়ে বের করে দিয়েছেন ভাবী?দৌঁড়ে গিয়ে একটা চাদর এনে দেয় জাফরের হাতে।লাগবে না। স্যুয়েটার পড়েছি তো।পড়–ন, যে শীত পড়ছে, শুধু স্যুয়েটারে কী শীত মানায়? এত রাতে বাইর থেকে এসেছেন, সর্দি লেগে যাবে, সর্দি হতে নিউমোনিয়া। এ বয়সে নিউমোনিয়া হলে বাঁচবেন না।আমি নিজের দিকে তাকাই। আমার গায়েও কেবল স্যুয়েটার, কোনো চাদও নেই। অবশ্য আমি জাফরের মতো বাহিত হতে আসিনি। এত ঈর্ষা করা ভালো নয়।চাদর এনে জাফরের হাতে দিয়ে বলল : ভাই, আপনার মুখ এত শুকনো কেন? নিশ্চয় সারাদিন কিছু খাননি?  আমি খাবার নিয়ে আসছি।না, ভাবী লাগবে না।না বললেই হলো? আমাকে এত নিষ্ঠুর ভাববেন না। এত রাতে না-খাইয়ে এক কাপড়ে বাসা হতে বের করে দিয়ে ভাবী কাজটা মোটেও ভালো করেননি। কীভাবে যে, মেয়েরা স্বামীদের সঙ্গে এত খারাপ আচরণ করে বুঝি না।খুট করে আমার মুখে একটু আদর টেনে দিয়ে বউ আমার রান্না ঘরে চলে যায়।কিছুক্ষণের মধ্যে গরম গরম খাবার চলে আসে। জাফরকে একপ্রকার জোর করে ডাইনিং রুমে নিয়ে যায় আমার বউ। আমিও যাই।জাফর বলল : আসো একসঙ্গে খাই, ভাবী আপনিও বসেন।না ভাই, আমি খেয়েছি।জাফর আমার দিকে তাকায় : মুখ বলছে তুমি ক্ষুধার্থ।বউ বলল : তুমি রাতে খাওনি?আমি বউয়ের দিকে তাকাই, বুঝতে পারছি না কী উত্তর দেব, কী উত্তর দেওয়া উচিত।